স্বদেশ ডেস্ক: ‘ধোনি (মহেন্দ্র সিং), কার্তিক (দিনেশ) আমাদের দেশের অনেক ভালো উইকেটকিপার। আরও আছেন। কিন্তু আমি মুশফিকুর রহিমকে আদর্শ মেনেছি।’ গুজরাটের এই ছোটখাটো গড়নের নারী ক্রিকেটারের কথা শুনে শুরুতে ধাক্কা লাগে সামান্য। প্রশ্নের উৎপত্তি তাই। মুশফিক কেন? দিল্লি জয় করে রাজকোটে এসে গতকাল সকালে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে প্রথম অনুশীলনে নামে বাংলাদেশ দল। আলো ঝলমলে সকালে নিবিড়ভাবে মুশফিককে দেখে চলা ২৩ বছরের রিধি আসেন এই চমক নিয়ে। রাজকোটের পাশের জামনগর তার শহর। গুজরাট অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়ক রিধি। সিনিয়র উইমেন্স ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে বেশ অভিজ্ঞ। সব মিলে রেকর্ডে রাখার মতো শ’খানেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। রিধিকে নিয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের পাশাপাশি আগ্রহী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ-ভারত ত্রিদেশীয় সিরিজের অফিশিয়াল ব্রডকাস্টার স্টার স্পোর্টসও।
মুশফিকের সঙ্গে দেখা করার স্বপ্ন নিয়ে তার মাঠে আসা। কথা বলবেন। ভাগ্য বেশি ভালো থাকলে টিপসও নেওয়া যাবে। ‘মুশফিকের মতো হতে চাই’ স্বপ্নভরা মায়াকাড়া চোখের মেয়েটা অবশ্য মুশফিকের সঙ্গে বছর দুয়েক আগেও দেখা করতে চেয়ে পারেননি। সেবার মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। ‘ঢাকায় প্রিমিয়ার লিগে খেলার সময় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সাকিব আল হাসানও আমার প্রিয়। দুজনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তখন পারিনি।’ এবার ভাগ্যদেবী ছিলেন খুব কাছে। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার সাব্বির খানকে রিধির কথা খুলে বলতে তিনি যান মুশফিকের কাছে। মিনিট কয়েকের মধ্যে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান আসেন। রিধির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুশলের সঙ্গে এটা ওটা জানতে চান। মিডিয়া তখন ছবি তুলতে আর ভিডিওতে ব্যস্ত। আর রিধি? ভেবেছিলাম টিপস চাইব কিছু।’ তারার মতো আলো ঝলমলে হয়ে ওঠেন রিধি। ঠিক এমনই দেখাচ্ছিল স্বপ্নের নায়ক-আইডল মুশফিকের সঙ্গে মিনিট দেড়েকের সাক্ষাতেও। রিধি জানালেন তার ভেতরে তখন কী চলছিল। ‘আমি তো বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলাম। দেখলেন না, একদম কথাই বলতে পারছিলাম না।’ স্বপ্ন যখন সত্যি হওয়ার মুহূর্তে ঘোরের মধ্যে ডুবে যাওয়া নিজের কথা বলতে বলতে হাসেন রিধি, ‘বলুন তাহলে টিপস কীভাবে চাইব? তাছাড়া তিনি বিরক্ত হন কি না এই সঙ্কোচে প্রশ্ন করিনি।’ নিপাট ভদ্রতা। তা মুশফিকের এমন ডাইহার্ড ফ্যান হলেন কীভাবে?‘ধোনি-কার্তিকরা অসাধারণ কিন্তু মুশফিকের সঙ্গে আমার খেলার স্টাইল ও ভাবনা মেলে।’ কিপিং করা মেয়ে ওপেনিং ব্যাটার। বলছিলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকে মুশফিককে অনুসরণ করি। তিনি কখনো হার মানেন না। ইতিবাচক থাকেন। এই মানসিকতা ভালো লাগে। তিনিও তেমন লম্বা নন। আমিও না। এই জন্য তার কৌশল আমাকে আরে বেশি টানে।’
ভারতকে দিল্লিতে ৩ নভেম্বর হারিয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে থেকে এখানে এসেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে টাটকা উদাহরণ দিলেন রিধি, ‘ওই ম্যাচে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার পর কী অসাধারণ আক্রমণাত্মক খেলেই না দলকে জেতালেন। আমিও এভাবে খেলি। তিনি যেমন ধীরে শুরু করে হঠাৎ গতি বাড়ান, আমিও তাই। আমিও তার মতো লেগ সাইডে খেলতে পছন্দ করি।’ খুঁজে খুঁজে রিধি মুশফিকের সঙ্গে আরও মিল টেনে আনেন। বিশেষ মিল হলো তিনি ৫ ফুটের মতো, মুশফিক তার চেয়ে ইঞ্চি তিনেক লম্বা। শেষে রিধি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়ে যান, ‘আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম সবচেয়ে খাটো। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে খাটো হলাম আমি। উচ্চতা আসলে কোনো ব্যাপার না। আমি মুশফিকুর রহিমের মতোই হতে চাই।’